শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৯ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়ায় অস্বাভাবিকভাবে সড়ক দূর্ঘটনা বেড়েই চলেছে!!

উত্তর বাংলা
  • আপডেটের সময় : বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৫৫ Time View

 

জুয়েল মাহমুদ উজ্জল, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। উল্টো গত তিন বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যু—দুটোই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। সাড়ে চার বছর আগে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল। সরকারের নানা প্রতিশ্রুতির পর তারা রাজপথ ছেড়ে যায়। কিন্তু সড়কে বিশৃঙ্খলা বন্ধ হয়নি। গত বছরের ১৮ নভেম্বর বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এই বিক্ষোভের মধ্যেই ২৪ নভেম্বর গাড়িচাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর পর তা রূপ নেয় নিরাপদ সড়কের ৯ দফা দাবির আন্দোলনে। এবার টানা ২০ দিনের বেশি আন্দোলন করে ঘরে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা।

সদ্য বিদায়ী ২০২২ সালে কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩০ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ২২ জন,নারী ৭ জন ও শিশু ১ জন। কুষ্টিয়া সড়ক দূর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা ১৭ জন,যার মধ্যে পুরুষ ১২,নারী ৪ জন ও শিশু ১ জন।কুষ্টিয়ার হাইওয়ের বেশ কিছু জায়গাতে সড়ক দূর্ঘটনা বেশি হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় এমন মৃত্যুকে হত্যা বলে মনে করছেন সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

সড়ক দূর্ঘটনার বিষয়ে কুষ্টিয়া বিআরটিএ এর সহকারি পরিচালক (ইন্জি:) মো: আতিকুল আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত জনসচেতনামূলক প্রোগ্রাম করে থাকি। যে গাড়ীগুলো ফিটনেস বিহীন সেই গাড়ীতে মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি এওয়ারনেস প্রোগ্রাম করে থাকি।এছাড়া কিশোরদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্কুলে সড়ক দূর্ঘটনা উপর সচেনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেমিনার করে থাকি।আমাদের পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।বিশেষ করে কিশোরের হাতে মোটর সাইকেল তুলে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশ অফিসার ইনচার্জ দেবব্রত রায় জানান,সড়ক দূর্ঘটনায় শুধু একজন ব্যাক্তি মারা যায় না, তার সাথে সাথে একটি পরিবারও ধংস হয়ে যায়। কুষ্টিয়াতে কোথায় কোন সড়ক দূর্ঘটনা হলে আমরা যত দ্রুত সম্ভব ঘটনাস্থলে যায়।সড়ক দূর্ঘটনায় যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় আমরা যত দ্রুত সম্ভব ঐ পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করি।শুধু তাই নয় ঐ দূর্ঘটনার মৃত ব্যাক্তির পরিবার লাশ নিয়ে কোন রকম ঝামেলায় না পরে সেই বিষয়ে বিশেষভাবে খেয়াল রাখি। হাইওয়ে পুলিশ সাধরণ মানুষের সচেতনতা সৃষ্টি করে থাকে।এছাড়াও কুষ্টিয়াতে বেশ কিছু হাইওয়ের স্থান আছে যেখানে বেশির ভাগ দূর্ঘটনা ঘটে,আমি ঐ সকল স্থানে বিশেষ সতর্কমূলক বিলবোর্ড ব্যবহারের জন্য আমাদের উর্ধ্বতন কর্তাকর্তাদের জানিয়েছি , ঐ সব স্থানে সতর্কতামূলক বিলবোর্ড ব্যবহার করলে দূর্ঘটনা কিছুটা হলেও কম হবে।

সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের দায়িত্বহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে সড়কে মৃত্যু কমছে না। অথচ সরকার এর দায় নিচ্ছে না। পরিবহন খাতের দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্য বন্ধ করতে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা বাস্তবে কতটা রয়েছে, সে প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েক ধাপে দেশজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে মোট ৮৫ দিন গণপরিবহন বন্ধ ছিল। এত দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়াকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য পত্রপত্রিকায় আসে না। ধারণা করা হয়, গণমাধ্যমে যে পরিমাণ তথ্য প্রকাশিত হয়, প্রকৃত দুর্ঘটনা তার চেয়ে চার বা পাঁচ গুণ বেশি। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে শুধু কমিটি গঠনে বেশি মনোযোগ না দিয়ে এবং সুপারিশ করার চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সরকারকে। এসবের চেয়ে বেশি জরুরি জনবান্ধব পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করা।

শেয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও
© All rights reserved © 2022 Uttorbangla24 live
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102