ছাতক প্রতিনিধি:
দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙ্গালীদের ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়। প্রভাত সূর্যের রক্তাভা ছড়িয়ে যায় বাংলাদেশের প্রান্ত থেকে প্রান্তে। সমস্বরে একটি ধ্বনি যেন নতুন বার্তা ছড়িয়ে দেয় ‘জয়বাংলা’ বাংলার জয়, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল। রচিত হয় স্বাধীন দেশের মানচিত্র ও লাল সবুজের একটি পতাকা। মহামুক্তির আনন্দ ঘোর এই দিনে এক নতুন উল্লাস জাতিকে প্রাণ সঞ্চার করে সজিবতা এনে দেয়। যুগ-যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত বাঙালি চোখে আনন্দ অশ্রু আর ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় সামনে। বিন্দু বিন্দু স্বপ্নের অবশেষে মিলন হয় জীবনের মোহনায়। বিশ্ব কবির সোনার বাংলা, কাজী নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, রূপের তাহার নেইকো শেষ, বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ। বাঙালি যেন খুঁজে পায় তার আপন সত্তা ও আপন ঠিকানা। বাঙ্গালীদের জন্য একটি নতুন দিনের সুচনা হয়। প্রতি বছর ১৬ ই ডিসেম্বরের এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেন। জাতীয়ভাবে মহান বিজয় দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে প্রতি বছর। ছাতকে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ১৬ ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। দিবসের প্রথম প্রহরে শিখা সতেরো স্মৃতি সৌধে ২১ বার তোপধ্বনির মধ্যে দিয়ে দিবসের সুচনা করা হয়। এর পর মাধবপুর এলাকার শিখা সতেরো স্মৃতি সৌধে পুস্পস্তবক অর্পন করেন মুহিবুর রহমান মানিক এমপি, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ছাতক উপজেলা ও পৌর শাখা, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ছাতক থানা, ছাতক হাসপাতাল, টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, ছাতক প্রেসক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্টান, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ছাতক পৌর সভা, সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনের নেতৃত্বে উপজেলা ও পৌর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল, এছাড়া হোটেল মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পন করেছেন। সকালে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে (মন্টু বাবুর মাঠ) আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। পরে মাঠে পুলিশ, আনসার বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্কাব ও গার্লস গাইডের সুসজ্জিত দলের কুচকাওয়াজ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্টিত হয়। খেলাধুলা, পুরস্কার বিতরণী সভা ও মাঠে অনুষ্টিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরের জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর মোস্তফা আহসান হাবিবের পরিচালনায় অনুষ্টিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান। এ সময় উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ ইসলাম উদ্দিন, সহকারী পুলিশ সুপার রণজয় চন্দ্র মল্লিক,ওসি মাহবুবুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব সৈয়দ আহমদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুসাদাত লাহিন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লিপি বেগম, ছাতক প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ হারুন অর রশীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার আনোয়ার রহমান তোতা মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফাসহ মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে আলোচনা সভা ও এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্টিত হয়েছে। ইউএনও নুরের জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্টিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মুহিবুর রহমান মানিক এমপি। বক্তব্য রাখেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ ইসলাম উদ্দিন, সহকারী পুলিশ সুপার (ছাতক সার্কেল) রণজয় চন্দ্র মল্লিক, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সীমা রাণী বিশ্বাস, ছাতক পৌর সভার সাবেক মেয়র আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহিদ মজনু, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব সৈয়দ আহমদ, প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ হারুন অর রশীদ প্রমুখ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থানীয় শিল্পীরা গান ও নাচ পরিবেশন করেছেন। উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ছাতকে শিল্প কারখানা, স্কুল- কলেজ ও মাদ্রাসা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথকভাবে মহান বিজয় দিবস পালন করেছে।