উত্তর বাংলা সংবাদ
রাষ্ট্রপতি চুপ্পু সরকারের জন্য গলাকাটা, মাহমুদুর রহমানের মতো সাহসী মানুষ উপদেষ্টা হলে নিশ্চয়ই আর ভালো কিছু হতো
বড় কোন হতাহতের ঘটনা ছাড়াই ২০০৭সালে বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতির পটপরিবর্তন হয়েছিল। ওয়ান ইলেভেন সরকার, আর ২০২৪এর অন্তবর্তীকালীন সরকারের চরিত্র প্রায় একই রকম। তবে প্রেক্ষাপট আর সরকারের শক্তি সামর্থ ভিন্ন। ২০০৭ সালের সরকারে যারা ছিলেন তারা ছিলেন অনেক যোগ্য দক্ষ সাহসী বিচক্ষণ। কেউ মানুক আর নাই মানুক অনেক সাহসী প্রদক্ষেপ তার গ্রহণ করেছিল, এমন কি মানতে বাধ্যও ছিলেন সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতারা। ২০২৪এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সহস্র প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত ঐতিহাসিক মহান বিপ্লবের পরে এই সরকারে যারা দায়িত্ব নিয়েছেন তারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ, চিহ্নিত দূর্নীতিবাজরা ধরাছোঁয়ার বাইরে, প্রশাসনে অচলাবস্থা, প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা। শেখ হাসিনার শাসন আমলের দীর্ঘ ১৬বছর বা তার শেষের দিকে এতো জগন্য হত্যাকান্ড, কত ভয়ংকর দূর্নীতি তারা করেছে (প্রায় ১৬লক্ষ কোটি টাকা)। দেশবাসী বিস্মিত হয়েছে, দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি নরপিশাচদের বিরুদ্ধে। অদৃশ্য হয়ে গেল সকল রাঘববোয়ালরা, এই বিষয়গুলো সরকারের জন্য অশনি সংকেত।
বিগত প্রায় আড়াই মাসে অনেক প্রদক্ষেপ তারা সাহসীকতার সহিত গ্রহণ করতে পারেননি। এই সরকারের চরিত্র, উদ্দেশ্য, দেশের মানুষ বুঝে উটতে পারছেনা। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে অজানা আশংকায় সরকার এবং জনগণের মধ্যে এক ধরনের চরম অস্থিরতা ভয় আতঙ্ক বিরাজ করছে। কি ঘটতে যাচ্ছে আগামী দিলগুলোতে? ৫ই আগষ্ট ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, শেখ হাসিনার দোসর এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া সমগ্র দেশবাসী সীমাহীন আনন্দে অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস সরকারের পক্ষে সমর্থন দিয়েছিল। দিন দিন এই সরকার মানুষের আস্থা সমর্থন ভালোবাসা হারাতে বসেছে। কয়েক জন সম্মানিত উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বেও বিতর্কিত ছিলেন, কেউ কেউ এখন সমালোচিত হয়েছেন। দু’য়েক জন উপদেষ্টা সফল হলেও বাকী উপদেষ্টাদপর সাফল্য অধরা।
যদি আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ডক্টর মাহমুদুর রহমান মতো বিচক্ষণ সাহসী দেশপ্রেমিক মানুষ থাকতেন উপদেষ্টা পরিষদে কার্যত এই সরকার আরো অধিকতর শক্তিশালী হতো। পিনাকী ভট্টাচার্য কিংবা সাংবাদিক মনির হায়দারের মতো ব্যক্তিদের যদি উপদেষ্টা বা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে দায়িত্ব দেওয়া হতো। তাহলে সরকার বা প্রধান উপদেষ্টা তাদের বুদ্ধিদৃপ্ত তথ্যবিত্তিক অনেক ভালো পরামর্শ কাজে লাগাতে পারতেন। মনে রাখতে হবে প্রায় ৭৫ বছরের অতি প্রাচীন সংগঠন আওয়ামী লীগের এমন ঘৃন্য পরাজয়, শেখ হাসিনা সরকারের পতন, বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়ার আধিপত্য খর্ব হওয়া, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়া, তারা কি এতো সহজেই এসব মনে নিবে? নিশ্চয়ই না।
রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পু এখন ননির পুতুল, তাকে নিয়ে এক ধরনের ধ্রুর্মজাল সৃষ্টি হয়েছে। তিনি স্বপদে থাকলেও বিপদ না থাকলেও বিপদ, মনে হচ্ছে ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস সরকারের জন্য তিনি এখন গলারকাঁটা।
এই মুহূর্তে মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন সেনাপ্রধান ওয়াকারুজ্জামানের ভুমিকা আগামীর বাংলাদেশের জন্য কেমন হতে পারে? তিনি কি সরকারকে সহযোগিতা করবেন, নাকি সরকারের বিরুদ্ধে হঠাৎ কোন অঘটন ঘটাবেন?
নিশ্চয়ই শেখ হাসিনা এবং ইন্ডিয়া প্রতিশোধের নেশায় অস্থির হয়ে আছে। তাদের পুরনো সাম্রাজ্য দখলে নিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টির যে কোন অবিনাশী খেলায় বড় কিছু অঘটন তারা ঘটাতেই পারে। চারদিকে গুজবের ডালপালা বিস্তৃত, কত ঘটনার আলামত গুমট বেধে আছে, দ্রুত সতর্ক না হলে চরম বিপদে পড়বে সরকার।
বিপ্লবের মহান আকাঙ্খা সমুন্নত করে সমগ্র জাতিকে জাগ্রত না রাখতে পারলে লন্ডভন্ড হয়ে যাবে আমাদের স্বার্বভৌমত্ব।
উপদেষ্টা পরিষদের কলেবর বাড়িয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে না পারলে, সম্ভাব্য মহাদূর্যোগ সহ নানাবিধ গভীর ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস সরকারের জন্য হবে প্রায় অসম্ভব। একটি শংকা মন থেকে সরাতে পারিনা সহস্রাধিক শহীদের আত্মত্যাগ কি বিফলে যাবে?
মোঃ নিজাম উদ্দিন, সাবেক চেয়ারম্যান
উত্তর খুরমা ইউনিয়ন পরিষদ ছাতক সুনামগঞ্জ।
যুগ্ম সম্পাদক সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি।