ইসমাইলুল করিম বান্দরবান প্রতিনিধি :
বান্দরবানের থানচি উপজেলা দুর্গম রেমাক্রি ইউনিয়নে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে র্যাবের গুলি বিনিময় হয়েছে। এই অভিযানে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ১৭ জন সদস্য ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এসময় বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম, উগ্রবাদী বই, লিফলেটসহ নগদ ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে প্রেস কনফারেন্সে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক এসব তথ্য জানান।
আটক জঙ্গিরা হলেন কুমিল্লা সদরের মো. আস সামী রহমান সাদ (১৯), বরগুনা বেতাগী এলাকাকার মো. সোহেল মোল্লা সাইফুল্লাহ (২২), পটুয়াখালী সদরের মো. আল আমিন ফকির মোস্তাক (১৯), কুমিল্লা লাঙ্গলকোট এলাকার মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে ওমর ফারুক (২৭), পটুয়াখালী সদরের মো. মিরাজ সিকদার ওরফে দোলন (২৬), মুন্সিগঞ্চ টঙ্গীবাড়ির রিয়াজ শেখ ওরফে জায়েদ (২৪), টুয়াখালী মহিপুরের মো. ওবাইদুল্লাহ (২০), পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জের জুয়েল মাহমুদ (২৭), টাইঙ্গাইল ধানবাড়ীর মো. ইলিয়াছ রহমান (৩২), ঝালকাঠি সদরের মো. হাবিবুর রহমান (২৩), কুমিল্লা সদরের মো. সাখাওয়াত হোসেন ওরফে মাবরুর রিসিং (২১), বরিশাল কোতয়ালীর মো. আব্দুস সালাম রাকি ওরফে দুমচুক রাসেল (২৮), কুমিল্লা লাকসামের যোবায়ের আহমদ (২৯), পটুয়াখালীর মো. শামীম হোসেন (২৬), হবিগঞ্জ জেলার তাওয়াবুর রহমান সোহান (২০), বরিশালের মাহমুদ ডাকুয়া (২০), মাগুরার মোহাম্মদ আবু হুরাইরা (২২)।
আটক কেএনএফ সদস্যরা হলো— লাল মোল সিয়াম বম, ফ্রাগ ক্রস, মালসম পাংকুয়া।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নতুন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও নব্য জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার জঙ্গি সদস্যরা থানচি লোয়াংমুয়াল পাড়া হয়ে রেমাক্রি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে সংবাদ পায় র্যাব। এ সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোর থেকে সন্ধ্যায় পযর্ন্ত ওই এলাকা অভিযান চালায় র্যাব। এসময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোড়ে জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যরা। আত্মরক্ষার্থে র্যাব ও পাল্টা গুলি ছুড়লে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুলি বিনিময়ের ঘটনায় র্যাবের ৮ সদস্য আহত হন জানান এই কর্মকর্তা।
র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের জানান, গ্রেফতারকৃত কেএনএফ সদস্য লাল মোল সিয়াম বোম জঙ্গি অভিযানের পর তা নেতৃত্বেই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হতে বিভিন্ন স্থানে সমতলে আত্মগোপন, চাঁদা, রসদ সরবরাহ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে জঙ্গিদের অবগত করত। আরেক সদস্য ফ্লাগ ক্রস জঙ্গিদের সাথে কেএনএফ প্রধান নাথান বম এর যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে কাজ করতো, সমতল থেকে পাহাড়ে বিভিন্ন পার্সেল তার নামে আসতো। গ্রেফতার মালসম পাংকুয়া জঙ্গিদের নিকট থেকে প্রাপ্ত নগদ অর্থ নাথান বোম এর কাছে পৌঁছে দেয়া ছিল তার মূল দায়িত্ব।এবং এই অর্থ দিয়ে অবৈধ পথে অস্ত্রসহ সাংগঠনিক কাজে বিভিন্ন মালামাল ক্রয় করা হতো।
এই পর্যন্ত কেএনএফ ও জঙ্গি সদস্য কতজন আটক করতে সক্ষম হয়েছে এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে র্যাবের পরিচালিত অভিযানে নতুন জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৩৮ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ এর ১৪ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। অভিযানে এ পর্যন্ত চলমান অভিযানে পাহাড় এবং সমতল থেকে বিভিন্ন শ্রেণির নেতাকর্মীসহ নতুন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া ৫৫ জন সদস্য আটক আর পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন ১৭জন সদস্যকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি।
বিভিন্ন মিডিয়া প্রকাশিত জঙ্গীদের প্রশিক্ষণের ভিডিও ফুটেজ প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, পাহাড়ে জঙ্গীদের প্রশিক্ষণের ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজের ১৭ জন জঙ্গি আটককৃতদের মধ্যে ৫জন সদস্য রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ২০ অক্টোবর যখন অভিযান পরিচালনা শুরু করলে তখন জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ছেড়ে বিভিন্নভাবে আত্মগোপনে চলে যায়। তবে তারা সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা এবং এক পক্ষ তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। এবং যাদেরকে আটক করেছি তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ সদস্য সংখ্যা প্রায় দুইশত জন।
কেএনএফ-এর প্রধান নাথাম বমের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তার অবস্থান সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পায়নি। জব্দকৃত নগদ সাত লক্ষ টাকা দিয়ে অবৈধ উপায়ে অস্ত্র ক্রয় করার জন্য নাথাম বম নির্দেশনা অনুযায়ী কিন্তু অন্যান্য সদস্যরা বাস্তবায়ন দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
উল্লেখ্য,পাহাড়ের ৯টি উপজেলা নিয়ে ‘কুকি-চিন রাজ্য’ প্রতিষ্ঠা করতে চায় কেএনএফ, গত বছর প্রায় ১ হাজার সদস্য নিয়ে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। গত ৯ অক্টোবর থেকে র্যাবের ও সেনাবাহিনী জেলার রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি ও রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নে জঙ্গী বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে। কেএনএফ আস্তানায় জঙ্গী সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার জঙ্গীদের প্রশিক্ষন দিচ্ছে, এমন অভিযোগ রয়েছে। এবং গেল ২৮ জানুয়ারি রুমায় পাইন্দু ইউনিয়নের মুননোয়াম পাড়া এলাকা যৌথ বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্য বেনেট থাং ম্রো নামে একজন গুলিতে নিহত হয়। তাদের নির্মূল করতে যৌথবাহিনীর অভিযান এখনো চলমান রয়েছে।