শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন

পাঁচবিবির বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত বিশাল সহ সকল হত্যার বিচার ও শহীদী মর্যাদা চান বাবা- মা।।

উত্তর বাংলা
  • আপডেটের সময় : সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৮ Time View

 

সাখাওয়াত হোসেন, পাঁচবিবি(জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর গ্রামের কলেজ ছাত্র নজিবুল সরকার বিশাল সহ আন্দোলনে নিহত সকলের হত্যার বিচার ও নিহতদের শহিদী মর্যাদা চান নিহত বিশালালের বাবা মজিদুল সরকার ও মা বুলবুলি খাতুন। সরেজমিনে নিহত বিশালের বাড়ীতে গেলে সাংবাদিকদের নিকট এ কথা বলেন তারা।

দেখা যায়, নিহত বিশালদের বাড়ী ভিটার জায়গা ছাড়া কিছুই নেই। ০৩ শতাংশ জায়গায় টিনের বেড়া আর টিনের চালা দিয়ে দুইটি ঘর। আঙ্গিঁনায় রান্না ঘর আর এক পাশে ছাগল বাঁধার জায়গা। ঘরের বারান্দায় বাবা শ্যালো মেকানিকের রাখা ভাঙ্গা যন্ত্রপাতি। আয় রোজগারের ভাঙ্গা যন্ত্রপাতি নিয়েই বাবা প্রতিনিয়ত বেরিয়ে যায় মানুষের বাড়ী বাড়ী শ্যালো মেশিন আর জমি চাষের পাওয়ার টিলার ঠিক করতে।
বাবার আয়েই উপর ভর করেই চলত সংসারের ভরণ পোষন আর নিজের সহ ভাইয়ের লেখা পড়া। কলেজ বন্ধের দিনে বাবার সাথে নিজেও কাজ করে টাকা উপার্জন করতো নজিবুল সরকার বিশাল(২০)।

পরিবারের পাশাপাশি নবম শ্রেণীতে পড়া ছোটভাই মুমিন সরকারকে ভালো করে মানুষ করার স্বপ্নও ছিল বিশালের। বাবা মা পরিবার আর ভাইকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে পাঁজরে লাগা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় শহীদ বিশালে দেহ। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন ০৪ আগষ্ট বেলা ১১ টার পর জয়পুরহাট জেলা শহরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় নজিবুল সরকার বিশাল।

বিশাল পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জি ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের বাবা মজিদুল সরকার আর মা বুলবুলি খাতুনের বড় সন্তান। পাঁচবিবি বিজনেজ ম্যানেজমেন্ট ইনষ্টিটিউট কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। ২০২৩ সালে রতনপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হয় বিশাল। ছোট ভাই মুমিন সরকার রতনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র। পুত্র শোকে নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়া বাবা মা বিশালকে নিয়ে কথা বলতে গেলেই ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছেন। মা বুলবুলি খাতুন বলেন দুই মাস হয়ে গেল, বাড়ীতে আর জোরে আম্মু ডাকতে শুনতে পাইনা।
পুত্র শোকে স্তব্ধ বাবা কথা বলতে না পারলেও মা বুলবুলি খাতুন বলেন ঘটনার দিন স্থানীয় বাজারে ওষুধ আনার কথা বলে সকালে ভাত খেয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে যায় বিশাল। এরপর দেড় দুই ঘন্টা পর শুনতে পাই বিশাল জয়পুরহাটে আন্দোলনে গিয়ে গুলি খাইছে। পরে জানছি জয়পুরহাট সদর হাসাপাতল থেকে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যায়।
মা বুলবুলি জানায় মারা যাওয়ার পর ওর বন্ধুদের কাছে জানতে পারি মোবাইলে বন্ধুদের সাথে আগের রাতে তাদের ফেসবুক গ্রুপে আন্দোলন নিয়ে আলাপ আলোচনা করে।
পরের দিন গ্রামের অনেক ছাত্রের সাথে সেও জয়পুরহাটে যায়। এর আগেও দু’দিন আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল সে। ঘটনার দিন বিশাল জয়পুরহাট শহরে যাওয়ার সময় অটোগাড়ীতে চড়ে দুহাত তুলে বলেছিল আমি যেন আজ শহিদ হয়ে বাড়ী ফিরে আসতে পারি, আল্লাহ যেন তাই কবুল করে। আমার ছেলে সত্যিই শহীদ হয়ে ফিরে এসেছে। আমি শহীদের মা হয়েছি। কাঁদতে কাঁদতে বলেন আমার ছেলে বন্ধুদের বলেছিল আমাদের তো তেমন কিছু নাই আমি যদি শহীদ হয়ে যাই তোরা আমার মা বাবাকে বলিস যেন একটু পোলাও রান্না করে এতিমখানার ছেলেমেয়েদের খাওয়ায়।
বুলবুলি খাতুন বলেন, আমার ছেলে বিশাল বলতো আম্মু আমাদের তো তেমন কিছু নাই, এনজিও থেকে লোন নেওয়া আছে আমি ভালো করে কাজ শিখে বিদেশ গিয়ে টাকা পাঠাবো যাতে তুমি সব করতে পারো। আর মুমিনকে ভালো করে লেখা পড়া শিখাবে। ওকে ভালো করে মানুষ করতে হবে। দীর্ঘ নিঃশ্বাষ ছেড়ে বিশালের মা বলেন আমার বিশালের কত স্বপ্ন ছিলো ছোট ভাইকে মানুষ করবে। ওর সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো। বিশালের মা জানায় ছেলের ভালো করে লেখা পড়া আর সংসারের আয় উন্নতি করার জন্য স্থানীয় বেসরকারী সংস্থা জাকস ফাউন্ডেশন থেকে ৬০ হাজার টাকা, ব্র্যাক থেকে ২৫ হাজার টাকা এবং সরকারী একটি বাড়ী একটি খামার থেকে ২৫ হাজার টাকা লোন নেওয়া আছে। ছেলে না থাকায় সংসারে অশান্তি আর আয় রোজগার কমে গেলেও এনজিওর কিস্তি ঠিকই দিতে হচ্ছে।
বিশালের বাবা মজিদুল সরকার বলেন ছেলে মারা যাওয়ার পরে জয়পুরহাট ১৪ বিজিবির পক্ষ থেকে বিজিবির অধিনায়ক তিন লাখ টাকা, আগের এসপি মোহাম্মদ নুর আলম(সদ্য বদলীকৃত) দেড় লাখ টাকা, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে এক লাখ, ছেলের কলেজ থেকে দশহাজার টাকা সহ স্থানীয় কিছু সহযোগীতা পেয়েছে। সরকারী ভাবে নাম ঠিকানা সব লিখে নিয়ে গেছে এখনও কিছু পাইনি। বাবা ছেলে মিলে উপার্জন করে একটা ভালো বাড়ী করার স্বপ্ন ছিলো সেটা আর করা হলোনা বলেন বিশালের বাবা মজিদুল সরকার। বিশালের মা বলেন আমার ছেলে নাই যেমন খারাপ লাগছে তেমনি শহীদের মা হওয়ায় আমার হাজারো ছেলে তৈরী হযেছে এটাই আমার ভালো লাগে। বাবা মজিদুল সরকার বলেন ছেলেতো শহীদ হয়ে গেছে আক্ষেপ করে কি করবো তবে আমার ছেলের হত্যাকারীদের যেন বিচার হয় এটাই আমার চাওয়া। বড় ছেলের স্বপ্ন ছিলো ছোট ভাইকে মানুষ করার সেই চেষ্টাই করে যাবো। বিশালের মা বলেন আমার ছেলে মারা গেছে সে শহীদ। আমি চাই দেশে যে সরকারই আসুক বর্তমান বা ভবিষ্যতে শুধু আমার ছেলে নয় আবু সাঈদ ,মুগ্ধ সহ যারাই শহীদ হয়েছে তাদেরকে যেন শহীদের মর্যাদা দেয়। তিনি বলেন আমার ছেলেকে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার হত্যা করেছে তাদের যেন কঠোর থেকে কঠোর বিচার হয় এটাই আমার চাওয়া।শহীদ বিশালের বাবা মায়ের এনজিও থেকে লোন মওকুফের বিষয়ে ব্র্যাক ও জাকস ফাউন্ডেশনের স্থানীয় কতৃপক্ষের সাথে কথা বললে তারা জানায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি মিললে সেগুলো মওকুফ করা যাবে। সরকারী একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের লোনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফা সুলতানা জানান, শহীদ বিশালের পরিবারের লোন মওকুফ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

শেয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও
© All rights reserved © 2022 Uttorbangla24 live
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102