জুয়েল মাহমুদ উজ্জল, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি:
আলোচিত কিশোর গ্যাং বাহিনী বিএসবি গ্রুপের সদস্যরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দ্যেশ্যে কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে এনএস রোডে কলেজ ছাত্র হৃদয় শেখকে নির্মমভাবে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন। কিশোর গ্যাং নেতা শেখ সজীবের নেতৃত্বে কলেজ ছাত্রকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় রোববার (২ এপ্রিল) ঘোষণা হবে। কুষ্টিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক সৈয়দ হাবিবুল ইসলাম আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
নারী ও শিশু আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী সাইফুদ্দীন বাপী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আগামীকাল আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। রায় ঘোষণার আগে এবিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এ মামলায় ৬ জন আসামি হলেন – কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকার সন্টুর ছেলে নিবীড় (২১), আড়ুয়াপাড়া এলাকার মিলন শেখের ছেলে সজিব (২৪), উদিবাড়ী এলাকার নান্নুর ছেলে সিয়াম হোসেন (১৯, রাজারহাট এলাকার ফারুকের ছেলে শাওন (২০), থানাপাড়ার কামাল উদ্দিনের ছেলে মোবারক (২০) এবং আব্বাসের ছেলে সামি (১৯)। তারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাই, মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত। তারা ভয়ঙ্কর গ্যাং গ্রুপ। দীর্ঘদিন ধরে পৌরবাজার, থানাপাড়া চরসহ অন্যান্য এলাকায় নানারকম অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত। এদিকে কুষ্টিয়া শহরে কিশোর গ্যাং গ্রুপের দৌরাত্ম বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কায় পড়েছেন সচেতন মহল। এসব কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম বন্ধে ব্যবস্থা না নিলে পরিনতি আরো ভয়ানক হতে পারে আশঙ্কা সাধারণ মানুষের।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোড এলাকায় কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে কিশোর গ্যাংয়ের নির্মমতার শিকার হয় হৃদয় নামে এক কলেজ ছাত্র। আড়ুয়াপাড়া এলাকার এসকে সজিবের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র কিশোর গাং বাহিনীর সদস্যরা হৃদয়কে হত্যার উদ্দ্যেশ্যে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করা হয়। মুমুর্ষ অবস্থায় হৃদয়কে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে কয়েকমাস ঢাকার হৃদরোগ ইন্সটিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এখনো সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেনি।
এঘটনায় কলেজ ছাত্র হৃদয়ের বাবা মোহাম্মদ শেখ বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া থানার এসআই সুমন কাদেরী মামলার তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর আদালত এ মামলায় সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। নির্ধারিত ধার্য তারিখে রোববার আদালতের বিচারক মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
মামলার বাদী মোহাম্মদ শেখ বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ছেলে হৃদয়কে কিশোরী গ্যাং বাহিনীর সন্ত্রাসীরা হত্যার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এলোপাতাড়ি ভাবে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। আমার ছেলে মাসের পর মাস হসপিটালে ভর্তি ছিলো। তার জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেছে। সে এখনো ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। নিয়মিত ঔষধ খেতে হয়। এখনো শরীরের সেই যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হয়। সন্ত্রাসীদের শাস্তি চাই, সকল আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আসামিদের শাস্তি দেখে আমার ছেলের মত আর কাউর উপরে যেন সন্ত্রাসী হামলা না করতে পারে কেউ সেই প্রত্যাশা করছি।
বাদী পক্ষের আইনজীবী আশুতোষ কুমার পাল (দেবাশীষ) বলেন, আগামীকাল (রোববার) আলোচিত এই মামলার রায়। এ মামলায় ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত। ৬ আসামি জামিনে আছেন। আমরা আশাবাদী অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবেন আদালত।