স্টাফ রিপোর্টার:
রাজশাহীতে জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল ও বিজ্ঞ দায়রা জজ-২ আদালতে একটি হত্যা মামলার রায়ে ৩ জন আসামীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে আরও ০৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন বিচারক।
রবিবার (৯ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় এ রায় ঘোষণা করা হয়। জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল ও বিজ্ঞ দায়রা জজ-২ আদালত এর বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সিদ্দিক প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী রায় পাঠ করে শোনান। এসময় রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী আসাদুজ্জামান মিঠু ও আসামীপক্ষের আইনজীবী এড: হামিদুল হক, এড:সাজ্জাদ হোসেন প্রামাণিক, এড: হুমায়ন কবির সাম্মি এবং আসামীগন কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৯/১০/২০ ইং তারিখ সন্ধ্যা পৌনে ৬টার সময় চারঘাট চৌ-রাস্তার মোড় হতে জালাল উদ্দীন নামের এক ভ্যান চালকের
ব্যাটারি চালিত অটো ভ্যানে ২/৩ জন অপরিচিত যাত্রীসহ রওনা করেন। এর পর
অনুমানিক ৬টা ৪৫ মিনিটের দিকে পশ্চিম বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের জুয়েল এর আম বাগানের পূর্ব পশ্চিম পার্শ্বে হিয়ারিং রাস্তা সংলগ্ন মেগেগুনি গাছের গোড়ায় ভ্যান চালক জালাল বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিতে থাকে। তার ডাক চিৎকার শুনে স্থানীয় জীবন সরকার ও তহরুল ঘটনাস্থলে এসে জালালের গলার ডান পার্শ্বে গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক চিকিৎসা প্রদান করা অবস্থায় ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় জালাল উদ্দিনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ঘটনা সুত্রে জানা যায়, বাদী ও বাদীর ছেলে অনিক মোবাইলে সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে সাক্ষীদের নিকট ঘটনার বিষয়ে শুনেন এবং বাদীর গলার ডান পার্শ্বে আড়াআড়ি প্রায় ৪ ইঞ্চি কাটা গভীর রক্তাক্ত জখম এর চিহ্ন দেখতে পান। তার পরনে একটি চকলেট কালারের হাফ শার্ট ও নীল রঙের চেক লুঙ্গি ছিল । গলার ক্ষতস্থান হতে প্রচুর রক্ত গড়ে তার পরিহিত পোশাক ও সারাদেহ ভিজে গেছে। ঘটনাস্থলের অদুরেই ০১ টি চাকু এবং বাদীর বাবার ব্যবহৃত ভ্যানটি পুকুরের পানিতে পড়ে ছিল। পরে থানা পুলিশ স্থানীয় জনগণের সহায়তায় বাদীর বাবার ব্যবহ্নত ভ্যানটি পুকুরের পানি হতে উদ্ধার করে। বাদীর বাবাকে গত ০৯/১০/২০২০ খ্রি: তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ১৮.৪৫ ঘটিকায় কে বা কাহারা (২/৩ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি) একই উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ধারালো অস্ত্র দ্বারা গলায় আঘাত করে হত্যা করে।উক্ত ঘটনার বিষয়টি চারঘাট মডেল থানার মোবাইল ফোনে সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছে বাদীর বাবার মৃতদেহ উদ্ধার পূর্বক পুলিশ কার্যক্রম গ্রহণ করে ময়না তদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পোস্ট মর্টেমের জন্য পাঠায় ।
এ ঘটনায় মৃত জালালের ছেলে আব্দুল মানিক গত ১০/১০/২০২০ ইং তারিখে চারঘাট মডেল থানায় একটি লিখিত
অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে চারঘাট মডেল থানার মামলা নং ০৮, তারিখ ১০/১০/২০২০ ইং, জিআর মামলা নং -২৬১/২০ (চারঘাট) রুজু করা হয়। মামলাটির তদন্তভার এস আই আনোয়ার হোসেন প্রাপ্ত হন। অতঃপর তদন্তে তিন জন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে প্রমানিত হওয়ায় চারঘাট থানার অভিযোগ পত্র নং ১৪৩, তারিখ ২৫/০৪/২০২১ ইং , ধারা ৩০২/৩৪ দ: বি: দাখিল করেন। চার্জ গঠনের পরে ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। উল্লেখ্য, এ হত্যা মামলার তিনজন আসামীর মধ্যে মিনারুল ইসলাম নামের ১জন আসামী ১৬৪ ধারায় আদালতে শিকারক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
আদালতে রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এড: আসাদুজামান মিঠু সাংবাদিকদের বলেন, আসামী মিনারুল ইসলাম, মাসুদ রানা ও জুলহাস ইমরুল কায়েস ওরফে জুয়েল গণের বিরুদ্ধে দ: বি: ৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় প্রত্যেক আসামীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন বিজ্ঞ আদালত।