নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আগামী ২৯ জানুয়ারী আ'লীগের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর আগমন কে ঘিরে চরম ব্যস্ত দিন পার করছে রাজশাহীর সর্বস্তরের প্রশাসন, সরকারি দপ্তর ও দলীয় নেতৃবৃন্দরা। এমন ব্যস্ত সময়ে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের সভাপতির সাথে গোপন বৈঠক ও সেল্টারের মাধ্যমে দলকে বিভাজন করছেন এমনটায় অভিযোগ রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ৫ নং আউচপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার জান মোহাম্মদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন থেকে শিবিরের সভাপতি হিসেবে পরিচিতি রয়েছে মুগাইপাড়া গ্রামের লায়েব আলী মাষ্টারের ছেলে মারুফ হাসানের। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে রাজনীতির পোশাক খুলে একজন চাকরিজীবীর লেবাস ধরে নেয় মারুফ হাসান। মারুফ হাসান বর্তমানে প্রাইম ব্যাংক ময়মনসিংহ ব্রাঞ্চের এক্সিকিউটিভ অফিসারের দ্বায়িত্বে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এর আগে ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বাগমারা উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন মারুফ। এই মারুফ হাসানের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে, যা ইতিমধ্যেই তার ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের নিকট পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে বিএনপিতে জায়গা না পেয়ে, ২০০৮ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের হাত ধরে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছিল এমনটায় জনশ্রুতি আছে সরদার জান মোহাম্মদের বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালের ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নিজের ভাগ্য বদলান তিনি। এরপর আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ ও নৌকার বৈঠা'র বদৌলতে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি জান মোহাম্মাদকে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগে যোগদানের পর থেকে দলের মধ্যে বিভাজন শুরু হয়। তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয় ততকালীন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শহীদ। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একই দলের দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। শুরু হয় ত্রিমুখি সংঘর্ষ। এতে শহীদের সমর্থকরা সেখান থেকে সরে গেলেও জান মোহাম্মদের সমর্থকেরা কোন ভাবে সরে দাঁড়ায়নি। বরং লাঠিসোঠা ও দেশীও অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাল্টা পুলিশের উপর আক্রমন করে বসে। পরে নিজের জান বাঁচানোর জন্য পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। এতে সারন্দি (ভাষুপাড়া) গ্রামের মফিজের ছেলে সিদ্দিক ও রহিমুদ্দিনের ছেলে রমজান @ রঞ্জু ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। সেখানে আরও ১৮-২০ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুইজন মারা যায়। পরে জান মোহাম্মদের বিরুদ্ধে বাগমারা থানায় দঃবিঃ আইনের ১৪৩/ ১৪৮/ ১৪৯/ ৩৩২/ ৩৩৩/ ৩৫৩/ ৩০২/ ১১৪ / ৩৪ ধারায় মামলা হয়। যার মামলা নং ১৫। সেই গন্ডগোলের কারনে নির্বাচন পিছিয়ে নেওয়া হয়। পরবর্তী নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জান মোহাম্মাদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে শুরু হয় তার তান্ডব। জামায়াত বিএনপির সাথে সক্ষতা করে বিচার শালিসের নামে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যার একটি প্রমান তুলে ধরা হলোঃ গত ২০২১ সালে ৮ আগষ্ট উপজেলার মুগাইপাড়া নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজ আল আসাদ @ হাফিজ মাষ্টার বাদি হয়ে বাগমারা থানায় মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা করেন। মামলার পর বাদিকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন ততকালীন ইউপি চেয়ারম্যান সরদার জান মোহাম্মাদ। পরে সমাধান করার নামে হাফিজ মাষ্টারের থেকে সাড়ে ছয় লক্ষ নেয় চেয়ারম্যান জান মোহাম্মাদ। উক্ত শালিসে বাদি ও বিবাদীদের স্বাক্ষরে মামলার সমাধান হলেও কোন টাকাই কাউকে দেননি জান মোহাম্মাদ। অর্থাৎ পুরো টাকা জান মোহাম্মাদ আত্মসাৎ করেছেন। যার তথ্য ও প্রমান রয়েছে। ২০২১ সালে তার নির্বাচনি এলাকার মুগাইপাড়া গ্রামে একটি বিল জবরদখল করেন। এরও তথ্য ও প্রমান রয়েছে। তবে সেই বিল নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ডজন খানেক মামলাও হয়েছে। পরে ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে দলের বিভাজিত অংশের পক্ষ থেকে আব্দুর রহিম নির্বাচন করেন এবং নিজের অপকর্মের কারনে বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। তবে তার এমন কার্যকলাপের কারনে অসন্তোস তৃনমুল নেতৃবৃন্দ ও বাগমারা ৪- আসনের এমপি এনামুল হক। বর্তমানে সরদার জান মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ১৮ টি মামলা চলমান রয়েছে। পরে এবিষয়ে সাবেক চেয়ারম্যান সরদার জান মোহাম্মাদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে শিবির সভাপতি মারুফ হাসানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি কোন রাজনীতির সাথে জড়িত না। তবে চেয়ারম্যান জান মোহাম্মাদকে চিনি, তার সাথে আমার পুকুর বা বিলের মাছ চাষ নিয়ে যোগাযোগ আছে।