সোহেল মিয়া,দোয়ারাবাজার(সুনামগঞ্জ):
মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে কাজ করছেন প্রায় ২৫ বছর ধরে। কলেজের সকল শিক্ষার্থীদের তিনি সন্তানের মতই মমতা ও ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সর্বদা ভাল-মন্দ বিষয়ে খোঁজ খবর রাখতে ভোলেন না শত ব্যস্ততার মাঝে।চলাফেরা ও জীবন যাপন করেন খুবই সাদামাটা ভাবে। নিজের আদর্শ ধরে রাখতে চান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। সুনামগঞ্জের ছাতক সরকারি কলেজ’র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তুলশী চরন দাস তার বাবার অনুপ্রেরণায় শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।
শিক্ষক তুলশী চরণ দাস ১৯৭০ সালের ৯ এপ্রিল সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার রৌয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি রৌয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন,দিরাই উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫-সালে এস এস সি এবং সিলেট মদন মোহন কলেজ থেকে কর্মাস নিয়ে ১৯৮৭ সালে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি ১৯৯০ সালে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সম্মান(২য় শ্রেণীতে ২য়) ১৯৯১ সালে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম কম পাশ করেন।
অক্ষরহীন কৃষক-কৃষাণী বাবা মায়ের তিন ছেলে সন্তানের তৃতীয় তুলশী চরণ দাস,বড় ভাই বিধান চন্দ্র দাস প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক,মেজ ভাই আরাধন চন্দ্র দাস শাল্লা সরকারি কলেজের গনিতের সহকারি অধ্যাপক।
শিক্ষক তুলশী চরণ দাস’র অসংখ্য ছাত্রছাত্রী এখন বিভিন্ন জায়গায় সম্মান জনক অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত আছেন। শিক্ষক হিসাবে তিনি যখন হিসাব বিজ্ঞান প্রাইভেট পড়াতেন তখন শিক্ষকের সন্তান, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও গরীব ছেলেমেয়েদের কোন টিউশন ফি নিতেননা এবং এটা তার বাবার নির্দেশ ছিল।
শিক্ষকতায় যোগদান: ১৯৯৮ সালে হবিগঞ্জ শচীন্দ্র কলেজে ব্যবস্থাপনার প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন তিনি,১৯৯৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর ছাতকের মঈনপুর জনতা মহাবিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন এবং ঐ তারিখেই এমপিওভূক্ত হন। ইনডেক্স নং ৪৩৯১৫৯।এই ইনডেক্স নিয়ে ২০০৬ সালের ১৯ নভেম্বর জনতা মহাবিদ্যালয় হতে ছাড়পত্র নিয়ে ২০ নভেম্বর, ২০০৬ এ ছাতক ডিগ্রি কলেজে যোগদান করেন ও ২০১৫ সালে সিনিউরিটির ভিত্তিতে সহকারি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন।কলেজের জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক হিসেবে ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের এক আদেশে ছাতক সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে যোগদান করে অদ্যাবধি সেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
ব্যাক্তিগত জীবন: ২ মেয়ে ও এক স্ত্রী রয়েছে। স্ত্রী ছাতক উপজেলার কালারুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে ছাতক সরকারি কলেজে এক বছর:শিক্ষার্থীদের শতভাগ ড্রেস নিশ্চিত করা,
শিক্ষক কমনরোম’র আধুনিকায়ন করা।
বিদ্যুৎতের আলাদা টান্সমিটারের ব্যবস্থা, প্রতিটি শ্রেনীকক্ষে (৩০ টি ফ্যান ক্রয়ের মাধ্যমে) প্রয়োজনীয় ফ্যানের ব্যবস্থা ও লাইটিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। প্রয়োজনীয় আলমারি ক্রয় ও মেরামতসহ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও বাস্তবায়ন করা।
ছাতক কলেজ নিয়ে ভবিষ্যৎ ভাবনা:অধ্যক্ষের রুম সকলের দৃষ্টি গোচর স্থানে স্থানান্তর করা। কলেজের সীমানা প্রাচীর নিশ্চিত করা,কলেজ ভবনে রংকরন, কলেজের শতভাগ রেজাল্ট নিশ্চিত করা,উন্নত পরিবেশ বান্ধব একে একটি মডেল কলেজে রূপান্তরিত করা।
শিক্ষক তুলশী চরন দাস বলেন, একজন শিক্ষককে আগে অনুকরণীয় আদর্শের অধিকারী হতে হবে; তারপর তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিকতার আদর্শিক রূপ চিত্রায়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন। দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজে একজন শিক্ষকই উপযুক্ত নাগরিক তৈরি করতে পারেন।
তিনি জানান, এইচএসসিতে ২০২০ -২১ সেশনে ছাতক কলেজ’র রেজাল্ট ছিলো ১৩টি প্লাস ও পাসের হার ৮৯% এবং ২০২১-২২ সেশনে ৩৯ টি প্লাস সহ পাসের হার ৯২%।
ভবিষ্যৎ এই ধারাকে আরও এগিয়ে নিতে তিনি ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এভাবে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে চান তিনি।