শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৯ পূর্বাহ্ন

৭টি বিয়ে করে সালিশে ৩ বউকে ছাড়লো ভাইরাল হওয়া রবিজুল

জুয়েল মাহমুদ উজ্জল, পরিচালক (উত্তর বাংলা)
  • আপডেটের সময় : সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪
  • ৪৮ Time View

কুষ্টিয়া অফিসঃ

ভাইরাল হওয়ার জন্য মিথ্যা ও প্রতারণার মাধ্যমে একের পর এক ৭টি বিয়ে করেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ির রবিজুল। এ ঘটনা নিয়ে দেশব্যাপী হৈচৈ পড়ে যায়। মুসলিম বিধানকে অমান্য করে বিয়ে করায় এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষ তার বিরুদ্ধে ফুসেও ওঠে। ফলে বিষয়টি নিয়ে এলাকার লোকজনের মাঝে চাপা ক্ষোভও বিরাজ করছিলো। এ নিয়ে এলাকাবাসী মিটিং করার সিদ্ধন্ত নিয়েও তা হয়নি। অবশেষে এলাকার মন্ডল মাতব্বররা শনিবার সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী বাজারে গ্রামের ২২ প্রধান মিলে এক গ্রাম্য শালিশ ডাকেন। শালিসে ৩ বউকে ছেড়ে কুষ্টিয়া পাটিকাবাড়ীর রবিজুলের ঘরে এখন ৪ বউ।

জানা যায়, গত শনিবার বিকালে সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী বাজারে গ্রামের ২২ প্রধান মিলে এক গ্রাম্য শালিশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রবিজুলকেও ডেকে আনেন তারা। বৈঠকে প্রধানের ভূমিকা পালন করেন স্থানীয় মাতবর নাজিম মন্ডল। এছাড়াও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সফর উদ্দিন, লিটন মন্ডল, মাজিলা দারুস সুন্নাহ বহুমূখী মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মো. মুফতি আলমগীর হোসাইন, পাটিকাবাড়ী বায়তুল আমান জামে মসজিদের পেশ ঈমাম মো. মীর শফিকুল ইসলাম, পাটিকাবাড়ী হেফজখানা ও বহুমূখী মাদরাসার শিক্ষক মিজানুর রহমান, মাজিলা পশ্চিমপাড়া দারুলউলুম হাফিজীয়া ক্বারিয়ানা মাদরাসার মুহতামিম ক্বারী মশিউর রহমানসহ গ্রাম প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে শরিয়ত মোতাবেক চারের অধিক স্ত্রী রাখার বিধান না থাকার ইসলামী ব্যাখা দেন মুহতামিম হাফেজ মো. মুফতি আলমগীর হোসাইন। এ সময় রবিজুলের পঞ্চম ও সপ্তম স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।

সকলের আলাপ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক একজন মুসলমান হিসাবে ৪জন স্ত্রী রাখার ব্যাপারে ঘোষণা দেওয়া হয়। অবশেষে ৭ বউওয়ালা রবিজুল এ সিদ্ধান্তকে মেনে নেন।
আলেম ওলামা ও এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে ৫, ও ৭ নং স্ত্রীদের তালাক দেওয়ার ঘোষণা দেন। আর ৬ নং স্ত্রী আগেই নিজে থেকে তালাক দিয়ে চলে গেছেন।

ওই মজলিসে ২ জন স্ত্রীকে ২ লাখ করে মোহরানা দিয়ে তালাকের ব্যবস্থা করেন।
বর্তমানে রবিজুলের এখন ৪ বউ থাকলো।
রবিজুল ইসলাম (৪০) পাটিকাবাড়ি গ্রামের মিয়াপাড়ার আয়নাল মন্ডলের ছেলে।

বৈঠকের প্রধান নাজিম মন্ডল বলেন, ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক চার স্ত্রীর বেশি রাখার বিধান নেই। সামাজিকভাবে বসে আমরা তাকে সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলাম। রবিজুল তার দুই স্ত্রীকে তালাক দিবেন বলে নিজেই অঙ্গীকার করেছেন।

সামাজিক বৈঠকে উপস্থিত আরেক গ্রাম প্রধান পাটিকাবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন বলেন, এটা অবৈধ বিয়ে। আমরা তাকে বাধ্য করিনি। তার দুই বউ মেনে নিয়েছে। তাদের কাবিন ও খোরপোশ বাবদ দুই লাখ টাকাও দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র পরিবারের সন্তান রাজিবুল মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিয়ে করেন জেলার মিরপুর উপজেলার বালুচর গ্রামের কিশোরী রুবিনা খাতুনকে। বিয়ের দু’বছরের মাথায় এই দম্পতির এক পুত্র সন্তান হয়। পরে স্ত্রী ও সন্তানকে বাড়িতে রেখে লিবিয়ায় পাড়ি জমান রবিজুল। সেখানে টাইলসের কাজ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। পরে লিবিয়াতে পরিচয় হয় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার হেলেনা খাতুনের সঙ্গে। সেখানে তারা দুজন সম্পর্কে জড়ান এবং একপর্যায়ে তাদের বিয়ে হয়।

তাৎক্ষণিক প্রথম স্ত্রীকে বিষয়টি না জানালেও পরে জানার পর তিনি এ বিয়ে মেনে নেন। এরপর প্রথম স্ত্রী রবিনাকেও লিবিয়া নিয়ে যান রবিজুল। সেখানে দুই স্ত্রী এবং সন্তান নিয়ে ১২ বছর বাস করেন তিনি। এরপর দেশে ফিরে বাবার ভিটায় দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেন।

এর কিছুদিন পরই মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের নুরুন্নাহারের সঙ্গে। পরে নুরুন্নাহারকে বিয়ে করেন রবিজুল। তবে নুরুন্নাহারের অভিযোগ, সম্পর্কের শুরুতে তিনি জানতেন রবিজুলের একজন স্ত্রী আছেন।

রবিজুলের দাবি, মায়ের মানত রক্ষায় ধারাবাহিকভাবে তিনি চতুর্থ বিয়ে করেন। তার চতুর্থ স্ত্রীর নাম স্বপ্না খাতুন। বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে। এরপর তিন মাসে পরপর তিনটি বিয়ে করেন রবিজুল। তার পঞ্চম স্ত্রীর নাম বানু খাতুন, বাড়ি আলমডাঙ্গা উপজেলার ডম্বলপুর গ্রামে। ষষ্ঠ স্ত্রীর নাম রিতা আক্তার। তার বাড়ি জেলার কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদাহ ইউনিয়নে। সর্বশেষ বিয়ে করা সপ্তম স্ত্রী মিতা খাতুনের বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে।

শেয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও
© All rights reserved © 2022 Uttorbangla24 live
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102