বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৫ অপরাহ্ন

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া ছিলেন নিখাঁদ দেশপ্রেমিক, ছিলেন বিশ্ব মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

উত্তর বাংলা
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪
  • ৯৬ Time View

 

কোন ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের ওপরই তার নেতৃত্ব নির্ভর করে। ব্যক্তিত্ব হচ্ছে ব্যক্তির চারিত্রিক দৃঢ়তা সততা এবং আশা আকাঙ্খা ও লক্ষ্যের প্রতিফলন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিত্ব কেমন ছিল? উত্তরে খুব সংক্ষেপে বলা যায়, তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল দীপ্তিময়। মধ্যাহ্নের সূর্যালোকের মতো প্রখর। প্রেসিডেন্ট জিয়ার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কোন প্রশ্নের অবকাশ নেই। তিনি ছিলেন অসম সাহসী যোদ্ধা, ধীরস্থির বুদ্ধিদীপ্ত এবং কঠোর কর্মট এক অসাধারণ দেশপ্রেমিক। দেশপ্রেমে তিনি ছিলেন আত্ম নিবেদিত। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভায় দূর দৃষ্টি সম্পন্ন একজন মহাপুরুষ আকাশচুম্বী জনপ্রিয়, বিশ্বের কাছে সমাদৃত। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও প্রবন্ধকার অধ্যাপক আব্দুল গফুর এক প্রবন্ধে বলেন,
মাওলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানিকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল হুজুর আপনাকে তো সব সময় সরকার বিরোধী ভূমিকায় দেখা গেছে। এমনকি যখন আপনার নিজের দল (পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগ) মন্ত্রীসভা গঠন করেছিল, তখনও আপনি একই জনসভায় দাঁড়িয়ে আপনার পাশে বসা মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বক্তৃতা দিয়েছেন। অথচ দেখা যায় আপনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। জিয়ার প্রতি আপনার দুর্বলতার কারণ কী? মাওলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানী জবাবে বলেছিলেন, দেখ তোমরা তো রাজনীতি দেখছ বহুদিন ধরে। আমার রাজনৈতিক জীবন আরও অনেক বেশি দিনের। আমার এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এদেশে এমন একটা লোক তো কখনও দেখলাম না, যে ক্ষমতার শীর্ষ বিন্দুতে পৌঁছে নিজেকে দূর্ণীতি আর স্বজন প্রীতির উর্ধ্বে রাখতে পেরেছে। আমাকে একটা উদাহরণ দেখাও? দূর্ণীতি আর স্বজন প্রীতির অনেক উর্ধ্বে ছিল জিয়ার অবস্থান। জিয়ার ছিল উচ্চ চিন্তা এবং সহজ সরল জীবন। জিয়া শুধু সহজ সরল জীবনের মূর্ত প্রতীকই ছিলেন না। দেশ ও দেশের জনগণের কল্যাণে সুউচ্চ মন, মহৎ চিন্তাও তাঁর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি ভোগ লিপ্সা, আরাম আয়েশ থেকে ছিলেন বহুদুরে। সদা সর্বদা জাতির কল্যাণে নিজেকে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে রাখতেন। জিয়ার নেতৃত্ব ছিল অসাধারণ অনন্য, তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও জাতির। তাঁর নেতৃত্ব ছিল কোমল কঠোরতার সংমিশ্রণে, তিনি নেতৃত্বকে জনগণের মধ্যে বিকাশ ঘটাতে চেয়েছিলেন। জনগনই দেবে দেশ গঠনের নেতৃত্ব, দেশকে সঠিক পথে উন্নয়নের লক্ষ্যে নেতৃত্ব দেবে জনগণ। তাই তো তিনি বলতেন, সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। নেতা হিসেবে তাই তিনি ছিলেন দেশবাসীর কাছে পরম শ্রদ্ধেয়, বরণীয়। তিনি কঠোর পরিশ্রমের প্রতীক, আত্ম নির্ভরশীলতা অর্জনে জনগণের কাছে প্রেরণার উৎস। সৎ একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক এবং অনন্য সাধারণ এক বলিষ্ঠ কর্মপ্রিয় মহাপুরুষ, যিনি টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া রূপসা থেকে পাটুরিয়া বিশাল জনগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে দেশ গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি যে সংকল্প করেছিলেন ৯কোটি লোকের অধ্যুষিত এই প্রিয় দেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর করে তুলবেন। তিনি যে গণতন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছিলেন তাঁর সব চাইতে বড় দৃষ্টান্ত হল সংবাদ পত্রের অবাধ স্বাধীনতা। যেখানে বিরোধী দলগুলোর বক্তব্য গুরুত্বের সাথে ছাপা হতো। ব্যক্তি জিয়া ছিলেন সহজ সরল মমতাপূর্ণ জীবনের এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। তিনি অনাড়ম্বর জীবন যাপন পছন্দ করতেন। সব সময় পুরনো কাপড় পরতেন। প্রেসিডেন্ট হয়েও পুরনো সুটকেসে রশি বেধে ব্যবহার করতেন, বেতনের টাকার কিছু অংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দান করে তিনি সততা ন্যায় ও সরল জীবনের যে পরাকাষ্টা দেখিয়েছেন তার তুলনা বিশ্ব রাজনীতিতে বিরল। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিশ্বাস করতেন যদি দক্ষিণ কোরিয়া একটা গতিশীল ও উন্নয়নগামী আর্থ সামাজিক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশ কেন পারবেনা? তিনি আরো বিশ্বাস করতেন পরমুখাপেক্ষী অর্থনীতি দেশকে সমুলে ক্যান্সারের মতো ধ্বংস করে দেয়। বাংলাদেশকে স্বাবলম্বী করা তার স্বপ্ন ছিল। তাই তিনি শুরু করেছিলেন মহাজাগরণের মহা বিল্পব, যশোহরের উলসী যদুনাথপুরের খাল খননের মাধ্যমে দেশব্যাপী খাল কাটা কর্মসুচী। এর উদ্দেশ্য ছিল জনগণকে দেশের উন্নয়নে এক সারিতে দাঁড় করানো। বৈদেশিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাঁর অবদান রেখেছেন মুসলিম উম্মাহর সমুন্নতির জন্যও তিনি কাজ করে গেছেন। ইরাক ইরান যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাতে তিন উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেছেন। তিনি ৯ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন, তিনি মক্কা শরীফে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন এবং তিন সদস্য বিশিষ্ট “আলকুদস” কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি কমন ওয়েলথ রাষ্ট্র প্রধান সম্মেলন (লন্ডন -লুসাকা-সিডনিতে) যোগদান করেন। তিনি ছিলেন সার্কের স্বপ্ন দ্রষ্টা।
জিয়াউর রহমান ছিলেন দেশপ্রেমে অনন্য, বিশ্ব মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। একটি কথা অবশ্যই স্বীকার্য যে জনগণ কোন নেতাকে অবমূল্যায়ন করে না। যার যে রকম স্থান পাওয়া দরকার জনগণ তাকে সে রকমই স্থান দিয়ে থাকে, আর তাই মেজর জিয়া, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া পেয়েছেন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় সিংহাসনে সবচেয়ে গৌরবময় আস্থা ও বিশ্বস্থতার আসন। প্রেসিডেন্ট জিয়া এটা অর্জন করেছিলেন। এটা তাঁর দেশপ্রেমের পুরস্কার।
ফলে তাঁর শাহাদাতের পর কেঁদেছে এদেশের প্রতিটি মানুষ। ১৯৮১সালের ৩০মে কতিপয় বিপথগামী সেনাকর্মকর্তাদের ঘৃন্য হামলায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাহাদাত বরণ করেন। সেদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল, একটি কফিনের পাশে যেন সমবেত হয়েছিল গোটা বাংলাদেশ। জিয়ার জন্য সেদিনের কান্না জনগণের বুকফাটা আহাজারি পাথরের বুকে অশ্রুর ধারা নির্গত হয়েছিল। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিজেকে বিখ্যাত করতে চাননি, শুধু দেশটাকে ভালোবাসতে চেয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর দায়িত্বকাল ছিল খুব অল্প দিনের, দেশের মানুষের ভালোবাসায় তাঁর সর্বোচ্চ বিলিয়ে দেওয়ার সময়টুকু তিনি পাননি। তবুও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এদেশের কোটি কোটি মানুষ কাছে আজও আকাশচুম্বী জনপ্রিয়। তাঁর জনপ্রিয়তায় ইর্শ্বানিত হয়ে আওয়ামী লীগ ঢাকা জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে তাঁর নাম মুছে ফেলে যা ঘৃণ্য রাজনীতির প্রকাশ। একটা কথা প্রমানিত সত্য যে, জোর করে কারো নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যায় না। আবার জোর করে কাউকে মানুষের মনে আসনও দেয়া যায় না, এটা যার যার কর্মের দ্বারাই মানুষ অর্জন করে থাকে। একটি বিমান বন্দর কিংবা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁর নাম মুছে দিলেই কি তিনি বিস্মৃত হয়ে যাবেন? মোটেও তা নয়। সত্য ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে গেলেও একসময় ঠিকই ফিরে আসে আপন শক্তিতে।
যারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ছোট করতে চাইবে পরিনামে তারাই ছোট হয়ে যাবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ এর পর তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন এদেশের মানুষের কাছে! জনগণ কতটা ভালোবেসেছিল এই মহান নেতাকে? আসলে মৃত্যুর পরই একজন মানুষের জনপ্রিয়তা পরিমাপ করা যায়। জীবিত অবস্থায় শক্তি দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে পেছনে হাজরো মানুষের মিছিল সাজানো যায়। কিন্তু মৃত্যুর পরে কফিনের পাশে শোকার্ত মানুষের জমায়েত হয় মৃত মানুষটির অতীত কর্মকান্ডের ওপর নির্ভর করে,তা়র ভালোবাসায়। এসময় জোর জবরদস্তি চলেনা, সুযোগও থাকেনা। আমাদের দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে জনপ্রিয় নেতা বা রাষ্ট্রনায়কের আবির্ভাব তো কম হয়নি। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই স্বীয় কৃতকর্মের কারণে শেষ পর্যন্ত জনগণের বির্তৃষ্ণার পাত্র হয়েছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো বাংলাদেশের ইতিহাসের বৃহত্তম এবং ক্ষুদ্রতম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এ দুটি জানাজার নামাজ হয়েছিল দু’জন রাষ্ট্রনায়কের। প্রশ্ন আজ মৃত্যুর পরে কে ছিলেন বেশি জনপ্রিয়? শক্তি খাটিয়ে মাটি থেকে একটা গাছ উপড়ে ফেলা যায় কিন্তু শক্তি দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না। মানুষের মন জয় করতে লাগে সুন্দর উন্নত মন মানসিকতা, লাগে দরদ ভালোবাসা দায়িত্ববোধ। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপির নেতাকর্মীদের তাই শিখিয়েছেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উদার মহত্ত্ব নিখাঁদ দেশপ্রেমের কারণে তাঁর আদর্শের পতাকাতলে গভীর শ্রদ্ধায় আজও দেশের কোটি কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা যতদিন থাকবে বহমান, ততদিনে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আজ তাঁর ৪৩তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

# লেখকঃ মোঃ নিজাম উদ্দিন, সাবেক চেয়ারম্যান
উত্তর খুরমা ইউনিয়ন পরিষদ, ছাতক সুনামগঞ্জ।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি।

শেয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও
© All rights reserved © 2022 Uttorbangla24 live
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102