ডেস্ক নিউজঃ
‘আপনি টাকা পয়সা কাউন্ট করে নেন। টাকা পয়সা গুনে নেওয়া সুন্নত। এখন আমার উপলব্ধি হলো আপনার কাছ থেকে টাকা নেওয়াটাই হলো আমার জীবনে মস্তবড় ভুল বা পাপ হয়েছিল। সেই পাপের শাস্তি এখন পাইলাম আমি’। কথাগুলো স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের খুলনা অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম আনিসুজ্জামানের।
হজম করতে না পেরে ঘুষ নেওয়া ১৬ লাখ টাকা ঠিকাদার আবুল কালামকে ফেরত দেওয়ার সময় এভাবেই নিজের ক্ষোভ ঝাড়েন আনিসুজ্জামান।
কালবেলার হাতে আসা ১ মিনিটের ২টি ভিডিওতে দেখা যায়- স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের খুলনা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে একটি থামানো গাড়িতে বসে তাকে টাকা ফেরত দিচ্ছেন। উপরের কথাগুলো টাকা ফেরত দেওয়ার সময়ের কথোপকথন।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, খুলনা নগরীর টুটপাড়া নির্বাহী প্রকৌশলীর ভাড়া বাড়ির সামনের রাস্তার। যশোরের ঠিকাদার মো. আবুল কালাম এর গাড়িতে বসে তার সঙ্গেই কথা বলছিলেন প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের যশোর মনিরামপুর প্রজেক্টে ডিডব্লিউ-১, ডিডব্লিউ-২, ডিডব্লিউ-৩ ও ডিডব্লিউ-৫ এর মোট ৪টি কাজ পায় এইসি- খান- মায়াজ-(জেবি) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার কার্যাদেশের মূল্য ছিল ২৮ কোটি টাকা। এ কাজ পাওয়ার পর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে কাজের ৩ শতাংশ ঘুষ দাবি করেন তৎকালীন স্থানীয়দের সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের যশোর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান। টাকার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করেন তিনি।
একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ১৬ লাখ টাকা ঘুষ দেয় আনিসুজ্জামানকে। কিন্তু এই টাকার পরেও বাকি টাকার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ অব্যাহত রাখেন তিনি। এতেও কাজ না হওয়ায় গেল বছরের ২৯ নভেম্বর যশোরের জেলা জজ আদালতে মামলা করেন ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক আবুল কালাম আজাদ।
মামলার পরে কানে পানি যায় ওই নির্বাহী প্রকৌশলীর। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া চালাতে থাকে। এরই মাঝে আনিসুজ্জামান বদলি হন খুলনা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে। বদলি হওয়ায় মামলা তুলে নেওয়ার হুমকির বদলে এবার এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেওয়া ঘুষের টাকাও ফেরত দিতে চান আনিসুজ্জামান।
ভিডিওতে দেখা যায় নির্বাহী প্রকৌশলী ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার আবুল কালামকে বলেন, টাকাগুলো গুনে নেন। টাকা গুনে নেওয়া সুন্নত। গুনে না দিলেও এমনি এমনি ব্যাংক কেমনে যেন দেখে (বলে তিনি নিজেই গুনতে শুরু করেন)। ওই সময় ঠিকাদারকে বলতে শোনা যায়, আপনি টাকা পয়সা না দিয়ে আমাকে একটা কাজ-বাজ দিয়ে কিন্তু বিষয়টা সমাধান করতে পারতেন। প্রতিউত্তরে আনিসুজ্জামান বলেন, কাজকাম দেওয়ার সুযোগ নাই। আরে বললাম তো আপনার সঙ্গে পরিচয় হওয়াটা আপনার সঙ্গে লেনদেন হওয়াটা জীবনে সব থেকে মস্তবড় ভুল হইছে আমার।
জানা যায়, একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দুর্নীতিতে জড়ানোর একাধিক অভিযোগে আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুদক।
এ বিষয়ে ঠিকাদার আবুল কালাম গাজী কালবেলাকে বলেন, আমি যশোর মনিরামপুর প্রজেক্টে ৪টি কাজ পাই। যার বাজার মূল্য ২৮ কোটি টাকার কিছু বেশি। এরপর থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া করতে থাকে আনিসুজ্জামান। টাকা দেওয়ার পরও আরও টাকার দাবিতে আমার কাজ বন্ধ করে দেয়। আমার সাব কন্ট্রাকটরদের ধরে নিয়ে যায়। কার্যাদেশ বাতিল করার জন্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে করতে তার বদলি হলেও নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী এসে আমার কার্যাদেশ বাতিল করে। এরপর কোর্ট স্থগিতাদেশ দিলেও কোর্টের আদেশ অমান্য করে নতুন টেন্ডার দেওয়া হয়। আমি খুলনায় টুটপাড়া কবরস্থানের সামনে গেলে সে আমার গাড়িতে উঠে আমাকে টাকা দিয়ে কথাগুলো বলে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যশোরে আসেন। তখন আমি তাৎক্ষণিক কাজের জন্য কিছু ঠিকাদারের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়েছিলাম। তার কাছ থেকেও কিছু টাকা নিয়েছিলাম। সেই দুই লাখ টাকা দিতে তাকে ডেকেছিলাম। কিন্তু সে গোপনে সেটা ভিডিও করেছে।